Clock Tower

Did Lord Vishnu's wife belong to different religion | বিষ্ণুর পত্নী কি বিধর্মী ছিলেন ?


Listen Later

কখনও শ্রীরঙ্গমের রঙ্গানাথাস্বামী মন্দিরে গেলে দেখবেন সেখানের বিষ্ণুমূর্তিকে রুটি, মিষ্টি ও ঘি ভোগ হিসাবে দেওয়া হচ্ছে। এই বিগ্রহকে রঙিন লুঙ্গির মতো কটিবস্ত্র পরানো। এই দুটো ঘটনাই কিন্তু বেশ অস্বাভাবিক। কেন? ভারতের প্রায় সবকটি বিষ্ণু, নারায়ণ বা কৃষ্ণের মন্দিরে প্রাচীনতা বজায় রেখে অন্নভোগ বা ফলভোগ দেওয়া হয়। কোথাও খিচুড়ি বা কোথাও পায়েস বা পায়েসম্‌। প্রাচীনকাল থেকে বেশিরভাগ হিন্দু মন্দিরগুলোতে মূলত অন্নভোগ দেওয়াই রীতি ছিল। দক্ষিণের প্রায় সবকটি বিষ্ণু মন্দিরেই বিগ্রহকে কটিবস্ত্র হিসাবে সাদা ধুতি পরানোই রীতি। তাহলে এই মন্দিরে এরকম রীতি কেন? রাধাকৃষ্ণের প্রেমের অনন্য প্রেমকাহিনি আমাদের সবার জানা। মীরার আর কৃষ্ণের প্রেমকাহিনিও হয়তো আমরা জানি। কিন্তু একজন সুলতানা আর কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনি? ভ্যালেন্টাইনস্‌ উইকে আজ থাকছে তেমনই এক প্রেমের গল্প।


সে গল্প বলতে গেলে ভারতের মধ্যযুগের এক অন্ধকারময় সময়ে যেতে হবে। এই গল্পের অনেকগুলো রূপভেদ আছে যদিও মূল নির্যাস একই। এই ঘটনার উল্লেখ মূলত পাওয়া যায় তামিল গ্রন্থ ‘কোইল ওজগু’ (Koil Ozhugu) থেকে।  তেরোদশ শতকের ভারতবর্ষ। ভারতের দক্ষিণের ধনশালী মন্দিরগুলোর দিকে নজর পড়েছে দিল্লির মসনদে থাকা সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর। তাঁর বিভিন্ন সেনাপ্রধানরা দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে আক্রমণ করে বিভিন্ন মন্দির লুট করে ধনসম্পদ নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। সেই একই সময়ে বাদশার অন্যতম সেনাপ্রধান মালিক কাফুর দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে একই বাসনা নিয়ে আক্রমণ করেন। শ্রীরঙ্গমের মন্দিরটি রক্ষা করতে তিনদিন বৈষ্ণব ভক্তরা লড়াই করেও পরাস্ত হন। মালিক কাফুরের সেনা মন্দিরের সোনাদানাসহ মন্দিরের মূল ধাতব মূর্তিও লুট করে দিল্লির দিকে ফিরে চলে। এই পুরো লম্বা যাত্রার সময়ে একজন মহিলা বৈষ্ণব ভক্ত সুলতানের সৈন্যকে গোপনে অনুসরণ করে দিল্লিতে গিয়ে পৌঁছায়। সেই মহিলা লুকিয়ে সুলতানের মহলে ঢুকে দেখতে পায় তাদের প্রিয় মূর্তিটি একটা ঘরে আরও অনেক জিনিসের সঙ্গে জমা পড়েছে। অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মতোই হয়তো খুব তাড়াতাড়ি মূর্তিটিও গলিয়ে ফেলা হবে। কোইল ওজগু গ্রন্থে এই মহিলাকে বলা হয়েছে ‘পিন থোডার্নডা ভাল্লি’, অর্থাৎ যে নারী অনুসরণ করেছিলেন।

সেই ‘পিন থোডার্নডা ভাল্লি’ মালিক কাফুরের মহলে অল্প কিছুদিন লুকিয়ে এক অদ্ভুত ব্যাপার দেখেন। মালিক কাফুরের কন্যা, সম্ভবত নাম সুরাতানি পিতার কাছে এই মূর্তিটি উপহার হিসাবে দাবি করেন। মালিক কাফুর তাঁর কন্যাকে এই মূর্তিটি দিয়ে দিলে, তাঁর কন্যা খেলার ছলেই পোষাক পরিয়ে ভোগ নিবেদন করে খেলতে থাকেন। এই গল্পের অন্য একটি রূপভেদে বলা হয়, এই রাজকন্যা দিল্লির বাদশার কন্যা ছিলেন। তিনি এই মূর্তিকে ভোগ হিসাবে রুটি ও ঘি-ই পরিবেশ করতেন, পোষাক হিসাবে উজ্জ্বল রঙিন কটিবস্ত্র পরাতেন। সুরাতানি হিন্দু পূজার রীতিনীতির কিছুই না জেনেও নিজের মতো করে সর্বক্ষণের জন্য মূর্তিটির সেবা করতেন। এমন কী তিনি রাতে এই মূর্তিটি নিয়ে একই বিছানায় শুতে যেতেন। বেশ কিছু গল্পে বলা হয়, ‘রঙ্গানাথাস্বামী’ নাকি রাতে নিভৃতে মানুষের রূপে সুরাতানির কাছে ধরা দিতেন।

‘পিন থোডার্নডা ভাল্লি’ শ্রীরঙ্গমে ফিরে সেখানের পুরোহিতদের জানান যে তাদের মূর্তি তখনও সুলতানের ঘরে অক্ষত রয়েছে আর তাদের উচিত মূর্তিটিকে মন্দিরে ফিরিয়ে আনা। সেই মতোই মন্দিরের পুরোহিত, গীতিকার, নৃত্যশিল্পী প্রভৃতিরা মালিক কাফুরের রাজসভায় গিয়ে তাঁর মনোরঞ্জনের জন্য নৃত্য-গীতি পরিবেশন করেন। মালিক কাফুর খুশি হয়ে তাদের কিছু দিতে চাইলে, তারা ‘রঙ্গানাথাস্বামী’র মূর্তিটি ফেরত নিয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করে। মালিক কাফুর এতে রাজি হলেও তাঁর কন্যা রাজি হন না। তাই সুরাতানি রাতে ঘুমিয়ে পড়লে দলটি এই মূর্তিটি চুরি করে পালিয়ে যায়। এই চুরির জন্য যদি সুলতানের সৈন্য আবার পিছু নেয়, এই ভয়েই তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নানাদিকে যাত্রা করে। একটি পরিবারের তিন প্রজন্মের তিনজন পুরুষের কাঁধে ভার পড়েছিল এই মূর্তিটি বনের পথে শ্রীরঙ্গমে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এই তিনজনেই ঘন জঙ্গলে পথ হারায়, কিছুদিন পরে দুজন সদস্য মারা যায়। একজনের পক্ষে আর ভারি মূর্তি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হল না।

ওদিকে ঘুম থেকে উঠেই সুরাতানি মূর্তিটি দেখতে না পেয়ে ঘোড়ায় করে একাই শ্রীরঙ্গমের দিকে যাত্রা করলেন। তারপর? 


স্ক্রিপ্ট- কৌশিক রায়, কণ্ঠ- শঙ্খ বিশ্বাস, সাউন্ড ডিজাইন- শঙ্খ বিশ্বাস,কভার- রৌনক

...more
View all episodesView all episodes
Download on the App Store

Clock TowerBy Kaushik Roy