
Sign up to save your podcasts
Or
পিকাই চুপচাপ বাউন্ডারির বাইরে এসে হতাশভাবে বসে পড়ে। বল্টু খেঁকিয়ে ওঠে, “একটা চারও মারতে পারিস না!”
“তুই থাকলে দেখতাম কত দম।”
“দম আর দেখতে হবে না। তুই বরং গাঁজায় দম দে। একটা লোপ্পা বল কভার ড্রাইভ করলেই হয়ে যায়...
“ফালতু কথা, বলবি না বল্টু। তুই গাঁজা টান।”
“তুই গাঁজাখোর...
দুজনের মধ্যে বচসা যখন তুঙ্গে তখন শঙ্খদা দুজনের পিছনে এসে বসে পড়ে, “আ!চুপ কর।খেলা তো শেষ। তোরা যা শুরু করেছিস, তাতে দেখি পাখিদের মতো গাঁজা টেনে সাতমহলা বানিয়ে ফেলবি তোরা!”
পিকাই আর বল্টু প্রায় একসঙ্গে বলে ওঠে, “পাখিরা গাঁজা খায়? আগে জানতাম না তো। একটা কেমন গল্প-গল্প গন্ধ পাচ্ছি।”
“অন্যপাখিরা খায় কিনা জানি না। তবে কলকাতার পাখিরা খেত!”
“খেত?” পিকাই মাথা চুলকায়। “শঙ্খদা, বলবে যখন খুলেই বলো না বাপু!”
শঙ্খদা স্বভাবসিদ্ধভঙ্গিতে এক পা ঘাসের উপরে লম্বা করে দিয়ে পাশে দুইহাতে ভর দিয়ে গল্প বলা শুরু করে।
সময়টা একেবারে উনবিংশ শতকের গোড়ার দিকের। ধরে নিতে পারিস ঐ মোটামুটি ১৭৯০ এর পর বা মোটামুটি ঐ রকম সময়ে। তখন কলকাতার বাবু গোছের ভদ্রসন্তানদের বাইজি বাড়ি থেকে সোনাগাছি যাওয়ার বেশ চল ছিল। তবে সেই অর্থে এঁদের বেশির ভাগেরই নেশা ছিল গাঁজার। বাগবাজার, বটতলা আর বউবাজার এই তিনটে ঠেক সেই সময় গাঁজার নেশা করার জন্য বিখ্যাত ছিল। রীতিমতো ক্লাব ঘরের মতো বানিয়ে সেখানে কলকাতার ভদ্রসন্তানরা অবধি গাঁজা টেনে পড়ে থাকত। গাঁজা টানতে টানতেই সম্ভবত তাঁরা আবিষ্কার করেছিলেন যে তাঁরা বুঝি পাখির মতো উড়তে পারেন। আর তাই কলকাতার বুকে তৈরি হল পক্ষীসমাজ। এঁরা শুধু নামে পক্ষী ছিল না, এক এক জন এক এক পাখির বেশভূষা পরে হাটে-বাজারে ঘুরতও বটে। বাগবাজারের পক্ষীদল এর মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ ছিল কারণ এই ঠেকে তৎকালীন গুণী গায়ক রামনিধি গুপ্ত অবধি আসতেন।
“রামনিধি গুপ্ত মানে নিধুবাবু যিনি কিনা ‘নিধুবাবুর টপ্পা’র জন্য বিখ্যাত?”
.
.
.
পিকাই জিজ্ঞাসা করে ওঠে, “এই যে তুমি বললে, গাঁজা খেয়ে সাতমহলা বানিয়ে ফেলার কথা, সেটারও কী কোনও অর্থ আছে? নাকি এমনিই?”
শঙ্খদা কপালে হাত ঠুকে বলল, “ও! ওটা বলতেই ভুলে গিয়েছি। দলে পক্ষী অনেক থাকলেও ‘পক্ষীরাজ’ কিন্তু সবাই ছিল না। যে ব্যক্তি একাসনে বসে একশো আট ছিলিম গাঁজা টানতে পারত, তাঁরা একটা করে ইঁট পেত। উপহার বা পুরস্কার বলতে পারিস। বা স্মারক। সেই ইট জমিয়ে যিনি একটা গোটা বাড়ি বানাতে পারতেন তিনিই পেতেন ‘পক্ষীরাজ’ উপাধি। কলকাতার ইতিহাসে এরকম পক্ষীরাজ ছিলেন দেড়জন। এক্ষুনি যে পটলডাঙ্গার রূপচাঁদ দাসের নাম করলাম তিনি ছিলেন একজন ‘পক্ষীরাজ’। তাঁর নামই হয়ে গিয়েছিল ‘রূপচাঁদ পক্ষী’।
.
.
.
পিকাই অধৈর্য হয়ে পড়ে, “তুমি বললে দেড় জন পক্ষীরাজ ছিল। তাহলে বাকি অর্ধেকের কী কেস?”
স্ক্রিপ্ট- কৌশিক রায় | কণ্ঠ - শঙ্খ বিশ্বাস | সাউন্ড ডিজাইন- শঙ্খ বিশ্বাস
পিকাই চুপচাপ বাউন্ডারির বাইরে এসে হতাশভাবে বসে পড়ে। বল্টু খেঁকিয়ে ওঠে, “একটা চারও মারতে পারিস না!”
“তুই থাকলে দেখতাম কত দম।”
“দম আর দেখতে হবে না। তুই বরং গাঁজায় দম দে। একটা লোপ্পা বল কভার ড্রাইভ করলেই হয়ে যায়...
“ফালতু কথা, বলবি না বল্টু। তুই গাঁজা টান।”
“তুই গাঁজাখোর...
দুজনের মধ্যে বচসা যখন তুঙ্গে তখন শঙ্খদা দুজনের পিছনে এসে বসে পড়ে, “আ!চুপ কর।খেলা তো শেষ। তোরা যা শুরু করেছিস, তাতে দেখি পাখিদের মতো গাঁজা টেনে সাতমহলা বানিয়ে ফেলবি তোরা!”
পিকাই আর বল্টু প্রায় একসঙ্গে বলে ওঠে, “পাখিরা গাঁজা খায়? আগে জানতাম না তো। একটা কেমন গল্প-গল্প গন্ধ পাচ্ছি।”
“অন্যপাখিরা খায় কিনা জানি না। তবে কলকাতার পাখিরা খেত!”
“খেত?” পিকাই মাথা চুলকায়। “শঙ্খদা, বলবে যখন খুলেই বলো না বাপু!”
শঙ্খদা স্বভাবসিদ্ধভঙ্গিতে এক পা ঘাসের উপরে লম্বা করে দিয়ে পাশে দুইহাতে ভর দিয়ে গল্প বলা শুরু করে।
সময়টা একেবারে উনবিংশ শতকের গোড়ার দিকের। ধরে নিতে পারিস ঐ মোটামুটি ১৭৯০ এর পর বা মোটামুটি ঐ রকম সময়ে। তখন কলকাতার বাবু গোছের ভদ্রসন্তানদের বাইজি বাড়ি থেকে সোনাগাছি যাওয়ার বেশ চল ছিল। তবে সেই অর্থে এঁদের বেশির ভাগেরই নেশা ছিল গাঁজার। বাগবাজার, বটতলা আর বউবাজার এই তিনটে ঠেক সেই সময় গাঁজার নেশা করার জন্য বিখ্যাত ছিল। রীতিমতো ক্লাব ঘরের মতো বানিয়ে সেখানে কলকাতার ভদ্রসন্তানরা অবধি গাঁজা টেনে পড়ে থাকত। গাঁজা টানতে টানতেই সম্ভবত তাঁরা আবিষ্কার করেছিলেন যে তাঁরা বুঝি পাখির মতো উড়তে পারেন। আর তাই কলকাতার বুকে তৈরি হল পক্ষীসমাজ। এঁরা শুধু নামে পক্ষী ছিল না, এক এক জন এক এক পাখির বেশভূষা পরে হাটে-বাজারে ঘুরতও বটে। বাগবাজারের পক্ষীদল এর মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ ছিল কারণ এই ঠেকে তৎকালীন গুণী গায়ক রামনিধি গুপ্ত অবধি আসতেন।
“রামনিধি গুপ্ত মানে নিধুবাবু যিনি কিনা ‘নিধুবাবুর টপ্পা’র জন্য বিখ্যাত?”
.
.
.
পিকাই জিজ্ঞাসা করে ওঠে, “এই যে তুমি বললে, গাঁজা খেয়ে সাতমহলা বানিয়ে ফেলার কথা, সেটারও কী কোনও অর্থ আছে? নাকি এমনিই?”
শঙ্খদা কপালে হাত ঠুকে বলল, “ও! ওটা বলতেই ভুলে গিয়েছি। দলে পক্ষী অনেক থাকলেও ‘পক্ষীরাজ’ কিন্তু সবাই ছিল না। যে ব্যক্তি একাসনে বসে একশো আট ছিলিম গাঁজা টানতে পারত, তাঁরা একটা করে ইঁট পেত। উপহার বা পুরস্কার বলতে পারিস। বা স্মারক। সেই ইট জমিয়ে যিনি একটা গোটা বাড়ি বানাতে পারতেন তিনিই পেতেন ‘পক্ষীরাজ’ উপাধি। কলকাতার ইতিহাসে এরকম পক্ষীরাজ ছিলেন দেড়জন। এক্ষুনি যে পটলডাঙ্গার রূপচাঁদ দাসের নাম করলাম তিনি ছিলেন একজন ‘পক্ষীরাজ’। তাঁর নামই হয়ে গিয়েছিল ‘রূপচাঁদ পক্ষী’।
.
.
.
পিকাই অধৈর্য হয়ে পড়ে, “তুমি বললে দেড় জন পক্ষীরাজ ছিল। তাহলে বাকি অর্ধেকের কী কেস?”
স্ক্রিপ্ট- কৌশিক রায় | কণ্ঠ - শঙ্খ বিশ্বাস | সাউন্ড ডিজাইন- শঙ্খ বিশ্বাস