দূর্গা পুজো পেরিয়ে গেল, লক্ষী পুজো ও শেষ। আগের এপিসোড যেখানে শেষ করেছিলাম, আজ সেখান থেকে শুরু করি - বসিরহাট চত্তরে মানে বসিরহাটে, টাকিতে বা আশেপাশের অঞ্চলে বেশিরভাগ বাড়িতে লক্ষীপুজো কিন্তু কোজাগরী লক্ষীপুজোর দিনে হয়নি, সেটা হবে কালীপুজোর দিনে। আমাদের বাড়িতেও তাই। বসিরহাট ছেড়ে এলেও রীতিগুলো পাল্টায়নি। ক্যালেন্ডারের লক্ষীপুজো কোজাগরী লক্ষী পুজো আর কালীপুজোর দিনেরটা দীপান্বিতা লক্ষী পুজো।
আমার জন্য এটা খুব একটা মজার ব্যাপার ছিল. আমার মামার বাড়িতে হয় কোজাগরী লক্ষী পুজো। এই পুজোটা করা হয় মাটির সড়ায় আঁকা লক্ষীর পটে। যখন ছোট ছিলাম - পুজোর পর মামার বাড়ি যেতাম ওখানে একটা লক্ষীপুজো আর তারপর বসিরহাটে ফিরে বাড়িতে আর একটা লক্ষীপুজো। তার মানে দুবার নাড়ু খাওয়ার সুযোগ।
নমস্কার আমি সৃজন, আজ আমার এই পডকাস্ট, সৃজনের পডাবলীতে শোনাচ্ছি - আমাদের বাড়ির লক্ষীপুজোর গল্প।
আমাদের বাড়িতে পুজোটা মূর্তিতে কিংবা পটে হয় না, হয় আড়িতে। এবার আপনি জানতে চাইবেন, আড়ি জিনিসটা কি। ওটা বেত দিয়ে বানানো গোল একটা পাত্র। তার চার দিক দিয়ে বেতের চারটে স্টিক উঠে উপরে একজায়গায় মিলে যায়। সেখানে, মানে টপটা গোল একটা চাকতি আর চারটে যে হাত উঠেছে তাতেও গোল চাকতি বানানো থাকে। পাত্রটা ধান দিয়ে ভরাতে হয়, তার সাথে একটা সোনার জিনিস, কড়ি এই সব দিয়ে লাল চেলি পরানো হয়, সাথে থাকে সিঁদুর কৌটো । এভাবে আড়ি সাজিয়ে তাকে লক্ষী ঠাকুর হিসাবে পুজো করা হয়। এর সাথে অলক্ষী বিদায়ের একটা ব্যাপার আছে। কলার খোলায় চালের গুঁড়ো দিয়ে অলক্ষী বানিয়ে, বাড়ির বাইরে সেটার পুজো করে ভাঙা কুলো বাজাতে বাজাতে চার রাস্তার মোড়ে রেখে আসতে হয়। আরো ডিটেল নিয়ম কানুন আছে, আমার অতটা জানা নেই।
একদম ছোটবেলায় ভাবতাম ক্যালেন্ডারের লক্ষীপুজোর দিন কেন লক্ষীপুজো হয় না। পরে দেখলাম দুবার পুজোর নাড়ু বা অন্যান্য প্রসাদ খাওয়ার মজাটা বেশি। এখন মনে হয় ধানকে পুজো করার থেকে বড় আর কি হতে পারে একজন বাঙালির কাছে, সাথে সোনা আর কড়ি, মানে সেই আমলের কয়েন। ধন ধান্যে থাকো আলো করে বলার জন্য এর থেকে বেটার উপায় আর কিই বা হতে পারত। আর এই হেমন্ত কালেই তো ঘরে নতুন ধান ওঠে। হয়ত ধান ওঠার জন্য আর একটু সময় পাওয়া যাবে বলে দীপান্বিতা লক্ষী পুজো, কোজাগরী থেকে আর একটু পড়ে হওয়ার রীতি শুরু হয়েছিল।
লক্ষীপুজোর প্রসাদ নিয়ে কিছু না বললে অন্যায় হবে। আমার দাদু মানে বাবার বাবা ওনারা চার ভাই। সবার বাড়ি পরপর, তো ছোটবেলায় দেখতাম এই চার বাড়ির সব মহিলারা এক সাথে একটা বাড়িতে বসে নাড়ু বানাতেন, খইয়ে টাটকা গুড় জ্বালিয়ে মুড়কি বানাতেন। আবার মামার বাড়িতে দেখতাম দিদারা নারকেল দিয়ে একটা জিনিস বানাতেন। নারকেল বাটা, গুড়, কর্পূর, এলাচ - এসব দিয়ে বানানো একটা জিনিস, সেটাকে পাথরের ছাঁচে ফেলে একটা মিষ্টি আইটেম বানানো হত, এটাকে গঙ্গাজলি বা তক্তি এই দুটোর কোন একটা বলা হত, আমার নামটা ঠিক মনে পড়ছে না এখন। নাড়ু , মুড়কি এসব তো এখন দোকানে পাওয়া যায়, কিন্তু ওই জিনিসটা আর কোথাও দেখিনি। আর দোকানের নাড়ুর স্বাদ নিয়ে কিছু না বলাই ভালো।
দীপান্বিতা লক্ষী পুজোয় আমার বাড়িতে আসার নেমন্তন্ন থাকল। নাড়ু, মুড়কি খাওয়াবো। আসবেন কিন্তু।
ভালো থাকবেন , সুস্থ থাকবেন, সৃজনের পডাবলী ফলো সাবস্ক্রাইব করা না থাকলে করে রাখবেন। কথা হবে শিগগিরই। আজ চলি। টাটা।