তিনি ফ্রান্সের খবর নিয়ে জার্মানিকে দিতেন আর জার্মানির খবর নিয়ে ফ্রান্সকে। ফ্রান্সকে খবর দিলেন জার্মান গুপ্তচরের দল সাবমেরিনে করে মরক্কো পৌঁছাবে খুব শীঘ্রই। আবার উল্টোদিকে জার্মানীকে খবর দিলেন খুব তাড়াতাড়ি ফেঞ্চ ও ব্রিটিশের যুক্ত বাহিনী জার্মানীর আক্রমণ করবে।
এই সময় খবর শুনতে যতটাই মারাত্মক হোক, এগুলো জার্মানী ও ফ্রান্স দুই পক্ষই তাদের অন্য গুপ্তচর মারফৎ আগেই পেয়েছিল এবং দুই পক্ষই খুব ভালোভাবে অবগত ছিল যে অন্যপক্ষ এই খবরগুলো জেনে গেছে। তাই মাতা হারির দেওয়া কোনো ইনফরমেশনই কোনো পক্ষের জন্যই লাভ দায়ক ছিল না। বরং জার্মানি অনেক অর্থ তার উপরে ব্যয় করে বেশ বিরক্তই। ১৯১৭ এর জানুয়ারী মাসে ফ্রান্সের ইন্টেলিজেন্স বার্লিনে প্রেরিত একটি গোপন রেডিও সংবাদ ইন্টারসেপ্ট করে। যেখানে জার্মান মেজর কালে জানাচ্ছেন Agent H21 খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংবাদ দিয়ে জার্মান ফোর্সকে সাহায্য করেছেন। সেই একই সংবাদে Agent H21 এর যে দৈহিক ও অন্যান্য যে বর্ণনা দেওয়া হয় তা মাতা হারির সাথে হুবহু মিলে যায়। ফেঞ্চ পুলিশ মাতা হারিকে প্যারিসে ডেকে পাঠায়। সেখানে আসতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জার্মানরা এত শক্তিধর দুর্ধর্ষ একটা জাতি তারপরেও যে এরকম ভুলভাল কাজ কি করে করে কে জানে? আজ্ঞে না, জার্মানরা মোটেই ভুল করেনি। কিছু কিছু সময় তারা অনেক কিছু জেনে বুঝেই করে। জার্মানরা ঐ সংকেতটা জেনে বুঝেই ফ্রান্স পুলিশের জন্য ছেড়েছিল। মাতাহারি তাদের জন্য এতটাই বাজে খরচের খাতায় চলে গিয়েছিল যে তারা যে কোনোভাবে মাতাহারির হাত থেকে নিষ্কৃতি চাইছিল, এদিকে যুদ্ধ নিরপেক্ষ এক রাষ্ট্রের নাগরিককে তারা চাইলেও সরাসরি গ্রেপ্তার করতে পারে না। তাই জেনে শুনেই ফ্রান্সের জন্য টোপ ফেলেছিল তারা।
.
.
গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাসে মাতাহারি ছিলেন এক গ্ল্যামারাস চরিত্র। তাঁর সামনে জার্মান সেনাপ্রধান থেকে ইউরোপের তাবড় তাবড় নেতাদের পোশাকের বাঁধন আলগা হয়ে যেত। তাঁর রূপের মোহ আর শরীরী বিভঙ্গে এক সময় মেতে উঠেছিল গোটা ইউরোপ। এ হেন এক চরিত্র কীভাবে পা বাড়লেন গুপ্তচরবৃত্তির রাস্তায়? কী হয়েছিল শেষ পরিণতি।
মূল রচনা ও স্ক্রিপ্ট - কৌশিক রায়