
Sign up to save your podcasts
Or
গ্যারি আকণ্ঠ মদপান করে তাঁর চেয়ারটায় লম্বা হয়ে বসে পড়ে। বেশ হতাশার সুরেই বলে ওঠে, “বিশ্বজিৎ, আমি নিজের জীবনটা একটা মরীচিকার পিছনে দৌড়ে নষ্ট করেছি। তুমিও একই ভুল করো না। মানুষ সত্যি জানতে চায় না। তাঁর প্রয়োজন ধর্মের আফিম। যাতে নেশায় বুঁদ হয়ে রাষ্ট্র চালানো যায়, যুদ্ধ চালানো যায়। কিন্তু নিজের ভিতরটাকে দেখা যায় না। আর এমনিতেও ধর্মগুরুরা সত্য সন্ধানের চেষ্টা প্রভুর মৃত্যুর পরে পরেই ত্যাগ করেছে। প্রভুর প্রথম ১২জন শিষ্যই যেখানে নিজেদের লাভের কড়ি গুনতে ব্যস্ত ছিলেন,তখন আর বাকিদের দোষ কী?”
.
.
সব রহস্য সমাধানের আগে আমাদের ফিরে যেতে হবে খৃষ্ট জন্মের বেশ কিছু বছর আগে। ছোট বেলা থেকে যে সমস্ত দৃশ্য চোখের সামনে ঘটতে দেখে তৈরি হয়েছে যিশু ও মেরির বিপ্লবী সত্ত্বা, সেটা জানতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রায় ২২০০ বছর আগের ইউরোপে। সময়টা অনুমানিক পঞ্চাশ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আশেপাশে। ইউরোপের প্রায় সবটাই তখন রোমানদের দখলে। ইতিমধ্যেই তাদের পরোক্ষ শাসন ব্যবস্থা ইজরায়েলের কোনও কোনও অংশে প্রত্যক্ষ্য রূপ নিয়েছে। সেই রকমই একটি জায়গা হল ইজরায়েলের উত্তর দিকে অবস্থিত গ্যালিলি। জায়গাটি অনেকাংশে পাহাড় দিয়ে ঘেরা।
গ্যালিলির বেশীরভাগ অংশই তখন রোমান সৈন্যদের সম্মিলিত পায়ের শব্দে গমগম করে। সাধারণ মানুষ রীতিমতন ভিত-সন্ত্রস্ত তাদের শাসনের জাঁতাকলে পড়ে। রোমান সৈন্যদের অত্যাচার ক্রমাগত মাত্রা ছাড়াচ্ছিল। ঠিক তখনই গ্যালিলির কিছু জ্ঞানী মানুষ মিলে তৈরি করল এক গুপ্ত সমিতি। তারা গোপনে গ্যালিলির সাধারণ মানুষকে রোমান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একজোট করার চেষ্টা শুরু করল। তাদের কল্যাণে গ্যালিলি ক্রমশ হয়ে উঠল ইউরোপের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের পীঠস্থান। আর সেই গুপ্ত সমিতির প্রধান কাজের জায়গা ছিল গ্যালিলির দক্ষিণে এক ছোট্ট মৎস্যজীবীদের গ্রাম, যার নাম ছিল ম্যাগডেলা। গ্রামটির চারদিক ঘেরা ছিল জলাশয় দিয়ে। আর সেই জলাশয়ের মাছ বিক্রি করাই ছিল ম্যাগডেলা’র বেশীরভাগ মানুষদের পেশা। অবশ্য তাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য রোমে চলে গিয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। আর সেখানেই হয়েছিল বিপদ। তারা দেখেছিল আসলে রোমানরা নিজেদের দেশে কতটা স্বাধীন। তাদের কাছে ছিল শিক্ষার স্বাধীনতা, অর্থের স্বাধীনতা যার কোনটাই গ্যালিলিতে ছিল না। রোমে প্রাপ্ত উচ্চশিক্ষাই তাদের বিদ্রোহী মানসিকতার জন্ম দেয়। গ্যালিলিতে ফিরে এসে তারা নিজেদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে তৈরি করে সেই গুপ্ত সমিতি।
.
.
যে সমস্ত বিদ্রোহীরা মাউন্ট আরবেল’এর গুহাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল তারাও খুব বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারল না। জুডেয়াতে থাকা রোমান সৈন্যদের একটা বড় অংশ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধ গড়ে তুলল মাউন্ট আরবেল’এর নীচে। তারা কষ্ট করে পাহাড় চড়ল না। বদলে তারা ছাউনি গড়ে তুলল মাউন্ট আরবেল’এর তলার সমতল ভূমিতে। তারা ভাল করেই জানতো বিদ্রোহীরা নিজেদের পরিবারসমেত লুকিয়ে আছে পাহাড়ের গুহাতে। তাদের খাদ্য এবং অন্যান্য সরঞ্জাম খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে আসবে। তখন তাদের নীচে নামতেই হবে। রোমান সৈনিকদের এই অবরোধ চলেছিল ছিয়াত্তর দিন। মাউন্ট আরবেল’এর গুহাতে অনাহারে মারা গিয়েছিল বেশ কিছু বিদ্রোহী পরিবার। কয়েক জন নীচে নামার সময় সৈনিকদের বর্শার খোঁচা খেয়ে মরেছিল। ছিয়াত্তর দিনের মাথায় জীবিত থাকা সর্বশেষ পরিবারটি মাউন্ট আরবেল’এর চূড়া থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল। বিদ্রোহ তখনকার মতন দমন হলেও এক ছাইচাপা আগুন রয়ে গিয়েছিল গ্যালিলি তথা সমগ্র ইজরায়েলের সাধারণ মানুষের মনে। সেই আগুনেই পুড়েছিল যীশু, মেরী ম্যাগডালেনরা।
.
.
.
মূল রচনা - বিশ্বজিৎ সাহা
স্ক্রিপ্ট- কৌশিক রায়
বিভিন্ন চরিত্র ও পর্বপাঠ- শঙ্খ বিশ্বাস
সাউন্ড ডিজাইন- শঙ্খ বিশ্বাস
কভার - রৌণক
গ্যারি আকণ্ঠ মদপান করে তাঁর চেয়ারটায় লম্বা হয়ে বসে পড়ে। বেশ হতাশার সুরেই বলে ওঠে, “বিশ্বজিৎ, আমি নিজের জীবনটা একটা মরীচিকার পিছনে দৌড়ে নষ্ট করেছি। তুমিও একই ভুল করো না। মানুষ সত্যি জানতে চায় না। তাঁর প্রয়োজন ধর্মের আফিম। যাতে নেশায় বুঁদ হয়ে রাষ্ট্র চালানো যায়, যুদ্ধ চালানো যায়। কিন্তু নিজের ভিতরটাকে দেখা যায় না। আর এমনিতেও ধর্মগুরুরা সত্য সন্ধানের চেষ্টা প্রভুর মৃত্যুর পরে পরেই ত্যাগ করেছে। প্রভুর প্রথম ১২জন শিষ্যই যেখানে নিজেদের লাভের কড়ি গুনতে ব্যস্ত ছিলেন,তখন আর বাকিদের দোষ কী?”
.
.
সব রহস্য সমাধানের আগে আমাদের ফিরে যেতে হবে খৃষ্ট জন্মের বেশ কিছু বছর আগে। ছোট বেলা থেকে যে সমস্ত দৃশ্য চোখের সামনে ঘটতে দেখে তৈরি হয়েছে যিশু ও মেরির বিপ্লবী সত্ত্বা, সেটা জানতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রায় ২২০০ বছর আগের ইউরোপে। সময়টা অনুমানিক পঞ্চাশ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আশেপাশে। ইউরোপের প্রায় সবটাই তখন রোমানদের দখলে। ইতিমধ্যেই তাদের পরোক্ষ শাসন ব্যবস্থা ইজরায়েলের কোনও কোনও অংশে প্রত্যক্ষ্য রূপ নিয়েছে। সেই রকমই একটি জায়গা হল ইজরায়েলের উত্তর দিকে অবস্থিত গ্যালিলি। জায়গাটি অনেকাংশে পাহাড় দিয়ে ঘেরা।
গ্যালিলির বেশীরভাগ অংশই তখন রোমান সৈন্যদের সম্মিলিত পায়ের শব্দে গমগম করে। সাধারণ মানুষ রীতিমতন ভিত-সন্ত্রস্ত তাদের শাসনের জাঁতাকলে পড়ে। রোমান সৈন্যদের অত্যাচার ক্রমাগত মাত্রা ছাড়াচ্ছিল। ঠিক তখনই গ্যালিলির কিছু জ্ঞানী মানুষ মিলে তৈরি করল এক গুপ্ত সমিতি। তারা গোপনে গ্যালিলির সাধারণ মানুষকে রোমান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একজোট করার চেষ্টা শুরু করল। তাদের কল্যাণে গ্যালিলি ক্রমশ হয়ে উঠল ইউরোপের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের পীঠস্থান। আর সেই গুপ্ত সমিতির প্রধান কাজের জায়গা ছিল গ্যালিলির দক্ষিণে এক ছোট্ট মৎস্যজীবীদের গ্রাম, যার নাম ছিল ম্যাগডেলা। গ্রামটির চারদিক ঘেরা ছিল জলাশয় দিয়ে। আর সেই জলাশয়ের মাছ বিক্রি করাই ছিল ম্যাগডেলা’র বেশীরভাগ মানুষদের পেশা। অবশ্য তাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য রোমে চলে গিয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। আর সেখানেই হয়েছিল বিপদ। তারা দেখেছিল আসলে রোমানরা নিজেদের দেশে কতটা স্বাধীন। তাদের কাছে ছিল শিক্ষার স্বাধীনতা, অর্থের স্বাধীনতা যার কোনটাই গ্যালিলিতে ছিল না। রোমে প্রাপ্ত উচ্চশিক্ষাই তাদের বিদ্রোহী মানসিকতার জন্ম দেয়। গ্যালিলিতে ফিরে এসে তারা নিজেদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে তৈরি করে সেই গুপ্ত সমিতি।
.
.
যে সমস্ত বিদ্রোহীরা মাউন্ট আরবেল’এর গুহাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল তারাও খুব বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারল না। জুডেয়াতে থাকা রোমান সৈন্যদের একটা বড় অংশ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধ গড়ে তুলল মাউন্ট আরবেল’এর নীচে। তারা কষ্ট করে পাহাড় চড়ল না। বদলে তারা ছাউনি গড়ে তুলল মাউন্ট আরবেল’এর তলার সমতল ভূমিতে। তারা ভাল করেই জানতো বিদ্রোহীরা নিজেদের পরিবারসমেত লুকিয়ে আছে পাহাড়ের গুহাতে। তাদের খাদ্য এবং অন্যান্য সরঞ্জাম খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে আসবে। তখন তাদের নীচে নামতেই হবে। রোমান সৈনিকদের এই অবরোধ চলেছিল ছিয়াত্তর দিন। মাউন্ট আরবেল’এর গুহাতে অনাহারে মারা গিয়েছিল বেশ কিছু বিদ্রোহী পরিবার। কয়েক জন নীচে নামার সময় সৈনিকদের বর্শার খোঁচা খেয়ে মরেছিল। ছিয়াত্তর দিনের মাথায় জীবিত থাকা সর্বশেষ পরিবারটি মাউন্ট আরবেল’এর চূড়া থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল। বিদ্রোহ তখনকার মতন দমন হলেও এক ছাইচাপা আগুন রয়ে গিয়েছিল গ্যালিলি তথা সমগ্র ইজরায়েলের সাধারণ মানুষের মনে। সেই আগুনেই পুড়েছিল যীশু, মেরী ম্যাগডালেনরা।
.
.
.
মূল রচনা - বিশ্বজিৎ সাহা
স্ক্রিপ্ট- কৌশিক রায়
বিভিন্ন চরিত্র ও পর্বপাঠ- শঙ্খ বিশ্বাস
সাউন্ড ডিজাইন- শঙ্খ বিশ্বাস
কভার - রৌণক