জগৎ বিচিত্রিত, বিচিত্র মানুষের জীবন। কিছু মানুষ থাকে যাঁদের জীবন অন্যদের চেয়ে আরও বেশি বিচিত্র। এই উপন্যাসের কামাল এমনই একজন মানুষ। যে মানুষ পছন্দ করেন, মানুষকে ভালোবাসেন। ভালোবাসার কারণে নিজত্বকে বিসর্জন দিতে ক্ষণকাল বিলম্ব করেন না। যাকে মুগ্ধ নয়নে দৃষ্টি ভরে দেখে গেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ও লেখক সুনীলদা। আমাদের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের নায়কের মতো চারিত্রিক মিল খুঁজে পান সুনীলদা কামালের মাঝে। যাকে তিনি ‘পরোপকারী কামাল’ নামেই ডাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। সুনীলদার মানুষ মানুষ উপন্যাসে আমরা কথাগুলো পেয়ে যাই। মানুষকে ভালোবাসার অলিখিত চুক্তিতে নিজের সাথে আবদ্ধ মানুষের সংখ্যা সমাজে যৎসামান্য, কামাল তাদেরই একজন।
কামালের জীবন যাত্রা তাঁর (সুনীলদা) মানস জগতে আলোড়ন তুলেছিল বলেই কলম তুলে নিতে দ্বিধা করেন নি সুনীলদা। কামালকে নিয়ে লিখেছেন ভালোবাসা প্রেম নয় এর মতো উপন্যাস। এক অনুপুঙ্খ কামাল সেখানে দৃষ্ট। মানুষ কামাল ও তাঁর ভালোবাসার এক উপাখ্যান।
কামালকে যেমন মনে হয় অকপট, অকৃত্রিম, নির্মল, তেমনি কর্তব্যকর্মে নিশ্চল, কঠোর, দৃঢ়। মানবতার ডাকে সুনীলদা তাঁর এই বন্ধুকে আহ্বান জানান,
আয় কানাই, আয় কামাল তোরা আয়
পৃথিবী ভর্তি বুড়োখোকাদের পাগলামি দেখে
আমরা একটা গাছ তলায় দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করি!
—একটা গাছ তলায় দাঁড়িয়ে - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
যার জীবন নামের প্রপঞ্চের পটে মানবতা আঁকা, সেই বিশাল পটের এক ক্ষুদ্রাংশ ‘ইমেইলে স্মৃতির আঙ্গিনায়’।
বেশ কয়েক বছর আগে অর্ন্তজালে আমাদের পরিচয়। দুজনের কথোপকথন সাহিত্যিক আর মানবিক বিভিন্ন আলোচনায় সীমাবদ্ধ। একদিন আমার ইমেইলের ঠিকানা চেয়ে বললেন একটি পাণ্ডুলিপি পাঠাবেন। পাণ্ডুলিপি কিছুটা অগোছালো আছে। আমি যেন দেখি, কোন পরামর্শ থাকলে যেন জানাই। ঘটনাগুলোর ক্রম অগোছালোর কারণে সময় নিয়ে পড়তে হলো। ভঙ্গিমা বিচারে লেখাটিতে নতুনত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, আঙ্গিক বিচারে একে উপন্যাস, আখ্যায়িকা না নতুন কোন নামে সংজ্ঞায়িত হবে তা পাঠান্তে পাঠকই নির্ধারণ করবেন আশা করি। পড়ে ভালো লাগার কারণ, দুজন অসমবয়সী মানব-মানবীর ভালোবাসার আকুলতা, মান-অভিমান, বাঙালীর চিরচেনা পারিবারিক জটিলতার জগত।
পাণ্ডুলিপি গোছানোর দায়িত্বটি পরম যত্ন আর ধৈর্য সহযোগে সম্পন্ন করেছের সাবা ইয়াসমিন, শুধুমাত্র ধন্যবাদ তার জন্য কম হয়ে যায়। টুকটাক ভুলত্রুটি সংশোধনে সহায়তায় নিজে যুক্ত হতে পেরে ভালো লাগছে।