বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট এবং চার্চ দ্বারা স্বীকৃত চারটি গসপেলের প্রায় দেড় হাজার বছরের অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং-এর কারণে এই গল্পের অনেকটাই পৃথিবীর মানুষের জানা হয়ে গিয়েছে, বিশ্বজিৎ। তবে কি জানো, এই গল্পে কিছু জায়গায় সিনেমার ‘এডিটিং’এর মতন করে কাঁচি চালানো হয়েছে। আমরা এবার সেই এডিটিং’এ বাদ যাওয়া অংশের কিছুটা জানার চেষ্টা করব। জানার চেষ্টা করব কী নেই সেখানে।
ছায়ামানব গুহার ভেতরে প্রবেশ করল। মেরী তাকে ভাল করে দুচোখ ভরে দেখলেন। মৃত্যুর দুদিন পর আবার ফিরে এসেছে তার আরাধ্য পুরুষ, যীশু। কিন্তু এমনটা কী ঈশ্বর ব্যতিত কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব! দুচোখে অবিশ্বাস নিয়ে সদ্য মানুষ থেকে ঈশ্বরে রুপান্তরিত হওয়া তাঁর আরাধ্য পুরুষের দিকে চেয়ে রইলেন মেরী ম্যাগডালেন। ঈশ্বর গুহার ভেতরে এসে তাঁর সামনে দাঁড়ালেন। বেশ কিছু সময় ধরে কথা হল তাঁদের…
মেরি সেদিন সেই পাহাড়ের গুহায় না গেলে খ্রিস্টান ধর্মের জন্মই হত না?”
দুই হাজার বছর ধরে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা আর খ্রিস্টান চার্চগুলো নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য মেরিকে সরিয়ে দিলেন। ভেবে দেখো, দুইহাজার বছর পূর্বে বিশেষত ইউরোপে নারীর কী সামাজিক পরিস্থিতি ছিল। সেখানে হঠাৎ করে একটি সংগঠনের নেতৃত্ব যদি একজন নারী দিতে শুরু করেন, তাহলে এত বছরের তৈরি এই নিয়মনীতি বিধিনিষেধ সব যে ভেঙে পড়ত। সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে, নারীর সমান অধিকার স্থাপিত হত। প্রভু হয়তো সেটাই চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর বাকি শিষ্যরা তা মেনে নেননি। যে সমান অধিকার সমাজের প্রতিটা জাতির মানুষ, লিঙ্গের মানুষ, বর্ণের মানুষের জন্য কামনা করে প্রভু আত্মাহুতি দিলেন, সেই মহৎ উদ্দেশ্যটা ধামাচাপা পড়ে তৈরি হয়ে গেল এক নতুন ধর্মমত। মেরি ম্যাগডালেন হয়তো নিজের দিক থেকে প্রভুর শেষ আদেশ পালন করেই সেদিন গুহায় এসেছিলেন এবং প্রভুর পুনর্জন্ম প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর বারট ব্রুম্যান’ দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন যীশুর অজানা জীবন নিয়ে। তিনি বলছেন, “নিউ টেস্টামেন্ট এবং সবকটা গসপেল অনুযায়ী মৃত্যুর পর ‘রেজারেক্টেড’ যীশুকে প্রথমবার দেখেছিলেন মেরী ম্যাগডালেন। তিনি মাউন্ট জিয়ন’এর গুহায় সেদিন যীশুর সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। তারপর ফিরে এসে বাকিদের এই ঘটনা জানান। বাস্তবে মৃত মানুষের পুনরায় বেঁচে ওঠা সম্ভব নয়। সেই ভাবে ভাবতে গেলে যীশুও পুনরায় বেঁচে ওঠেননি। আসলে তাঁর সঙ্গে মেরী ম্যাগডালেনের সম্পর্ক এতটাই গভীর ছিল যে নিজের চোখের সামনে ঘটা যীশুর মৃত্যুকে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি মেরী। দুদিন পর যখন মেরী সেই গুহায় গিয়েছিলেন তখন তিনি নিজের কল্পনায় যীশুকে দেখতে পেয়েছিলেন, যাকে বলে ‘হ্যালুসিনেশন’। মেরী ম্যাগডালেন যে জীবনের কোনও এক সময় ‘হিস্টিরিক’ অথবা ‘এপিলেপ্টিক’ ছিলেন সেই প্রমাণ আমরা আগেই পেয়েছি। তাই নিজের প্রাণের চেয়েও প্রিয় মানুষ যীশুকে ‘হ্যালুসিনেট’ করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়। তারপর মাউন্ট জিয়ন থেকে ফিরে এসে মেরী তাঁর সেই অভিজ্ঞতার কথা সকলকে জানান। আর এই ঘটনাই (যীশুর রেজারেকশন) জন্ম দিয়েছিল খ্রিস্টানিটির। সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অর্থাৎ মেরী ম্যাগডালেন ছাড়া খ্রিস্টানিটির জন্মই হত না। সেই হিসেবে খ্রিস্টানিটির জন্মের নিরিখে যীশুর চেয়েও মেরী ম্যাগডালেনের গুরুত্ব বেশি।”
বিভিন্ন চরিত্র ও পর্বপাঠ- শঙ্খ বিশ্বাস
সাউন্ড ডিজাইন- শঙ্খ বিশ্বাস